পরন্ত বিকেল। রুপা বিষন্ন একাকী এলোচুলে জানালার গ্রিল ধরে বাহিরের স্থির দৃষ্টি মেলে পথ পানে চেয়ে আছে। মনের ভিতর এক শূন্যতা নিয়ে অনাকাঙ্খীত ভাকে কাউকে আশা করছে। এমন সময় দারোয়ান রহমত আলী এসে দড়জায় কড়া নেরে বলে- রুপা আপা, আপনার একজন গেষ্ট এসেছে। রুপাঃ কে? তুমি কি তাকে চেন? রহমত আলীঃ রাজ ভাইজান। রুপাঃ ওনাকে ওয়েটিং রুমে বসতে দেন। আমি ফ্রেস হয়ে আসছি। রহমত আলী চলে যায় রুপা চেয়ার ধপ করে বসে পড়ে মনে মনে ভাবে- রাজ, হঠাৎ দু’বছর পর! মুহত্বে বিষন্ন হয়ে হেলেও পরক্ষণে ভিতর থেকে চেহারায় দুচিন্তার ছাপ ঝড় হাওয়ার ঝটকানিতে দুরিভূত হয়ে যায় এক অজানা শিহরণে। ভিতরে আনন্দে উচ্ছসিত হওয়ার দৃশ্যমান হয়ে ওঠে টোলপড়া গালে।
রাজ ওয়েটিং রুমের এক কোণে বয়সের ভাবে বুড় অমৃণ কাঠের ব্রেঞ্চের উপর বসে উচাটন মন নিয়ে ভাবছে সেই শৈশবের থেকে যৌবনের স্মৃতিচারণ করছে। ১৯৯২ সালের কথা, রাজের বোনের চাকুরী সুবাধে দিনাজপুর আসে। ব্যাচেলার হওয়ার কারণে একা একটা ডরমিনটরিতে থাকা খুবই সমস্যা হচ্ছিল তাই রাজকে নিয়ে আসে । রুপার বাড়ি রাজশাহী। মেরিনার কলিগের বোনের মেয়ে। ছোট বেলা থেকে খালার থাকে। পাশাপাশি বিল্ডিং এ থাকতো ওরা। রুপকথার গল্পের মতোই ১২ বছর বয়সে, সবে ৫ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় একদিন হাঠৎ ছোট্ট একটা চিরকুটে ‘ ও খড়াব ণড়ঁ’ লিখে বারান্দার গ্রিলের ফাক দিয়ে রুপা হাতে গুজে দিয়ে ভোঁ দৌড় দিয়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনা কলনির সকল ছেলে মেয়ে সবাই জানে যায়। এমনকি রাজের বাড়ির সবাই সেই ছোঠ বেলাতে জেনে যায়। শৈশবে সেই ভালোবাসা বাসির কথা হাসি ঠাট্টার মাঝেই হারিয়ে গেলেও রুপা আর রাজ সেই কথা কখনোই ভুলে যাই নি। তখন ভালোবাসার মানুষ মানে- ভাল একজন বন্ধু। খেলার সাথী। স্কুলে যাওয়ার সঙ্গী। এই ভাবেই শৈশবে দিন কাটতে কাটতে একদিন মেরিনার ট্রান্সফার লেটার চলে আসে। কুড়িতেই শুকিয়ে পড়ে দুটি কলি। এক বৃষ্টি ঝড়া আষাড়ের মেঘলাময় সকালে রাজ রুপার বাল্যপ্রেমের গল্পের সমাপ্ত হয়। দিন-সপ্তাহ-মাস-বছর-যুগ পেরিয়ে ১৩ বছর পর কৌশরের দিনগুলো পেরিয়ে সদ্দ্য যৌবনে আড়মোড়া ভেঁঙে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ একদিন স্বপ্নের মতোই রুপা আবার রাজের জীবনে আসে। রুপা পাবনা নার্সিং ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা করতে আসে। ছোট বেলার খেলার সাথী আজ জীবন সাথী হওয়ার স্বপ্নে দুজনই বিভোর। এভাবে মন দেওয়া নেওয়া চলতে চলতে ২০০৫ সালে হঠাৎ করে রুপা রাজের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। রাজ জানতে পারে না রুপা কেন এমন করছে! কি তার ভুল ছিল? কিছুদিন এমনি ভাবে চলতে থাকে রাজও এক সময় যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এভাবে এক এক করে দুইবছর কেটে। আজ, রাজ রুপার সাথে নার্সিং ইনস্টিটিউটে এসেছে রুপা বিদায়ের কথা শুনে। ১৭ বছরের এলোমেলো অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে ওয়েটিং রুমের নিবরতা ভেঙ্গে গলায় খাকির দিয়ে রুপা রুমে প্রবেশ করে। রাজ রুপার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রুপা কি বলবে ভেবে পায় না। কিছুক্ষণ এভাবে অভিমান ভরা দৃষ্টি বিনিময়ে কেটে গেলে রুপা বলে- কেমন আছ? রাজঃ এই তো, চলে যাচ্ছে দিন। রপাঃ হঠাৎ যে এই পথে? রাজঃ কেন? এই পথে আসা বারন নাকি? রুপাঃ না , এতো দিন আসনি তো, তাই! রাজঃ তুমিই কি একবার ডেকেছিলে? রুপা কথাগুলো শুনে কি বলবে ভেবে পায়না। আনমনে স্থির দৃষ্টি দিয়ে বাহিরে ডুবন্ত সূর্যের আগুন লাগা সন্ধ্যার দৃশ্য অবোলকন করছে। মুহুত্বে ওয়েটিং রুমের মধ্যে রাজ্যে নিরবতা নেমে এসেছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। রুপা নিরবতা ভেঙ্গে বলে- রুপা ঃ আগামী কাল আমি চলে যাচ্ছি। রাজঃ জানি, রুপা একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে? রুপাঃ বল, কি ? রাজঃ আমার ভুলটা কি ছিল? কেন আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেদিয়েছ? রুপা আর কোনো জনাব দিতে পাবে না। ক্ষণকালের জন্য আবার নিরবতা নেমে আসে। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর রুপা বলে- তুমি তো জানোই খালু চান না আমি তোমার সাথে.... রাজঃ ও ! এই কারণ। ভাল । বেশ ভাল। আর কি? আমি একটা বাজে ছেলে? রুপাঃ কে বলেছে? আমি কি কখনো বলেছি? রাজঃ না, জানতে পারলাম। রুপাঃ কোথা থেকে? রাজঃ তোমার বড় খালা আামাকে বলেছে। যাই হোক আমি না হয় মিথ্যা একটা অপবাদ নিয়েই থাকবো। রুপা , আমাদের কি আর কোনো দিন দেখা হবে না? রুপাঃ জানি না। তবে আশায় বুক বেধে প্রতীক্ষায় থেকো। পরাধীনতার শৃংঙ্খল ভেঙ্গে যদি কোনদিন আসতে পারি! রাজঃ তোমার নতুন ঠিকানাটা? রুপাঃ চিঠি না। মোবাইলে কথা হবে। কথাগুলো বলতে বলতে রুপা একটি প্যাডের কাগজে আগে থেকে লিখে রাখা মোবাইল নম্বরের চিরকুটটি হাতে দিয়ে রুপা বলে- এই নম্বরে ফোন করো, আমাকে পাওয়া যাবে। বিদায় বেলার দু’বছরের চাপা অভিমান আর না বলা কত কথা বলতে বলতে মুয়াজ্জিনের কন্ঠে আযানের ধ্বনিতে ধরনীর বুকে সন্ধ্যান নামলে রহমত আলী এসে বলে- রুপা আপা, ভিজিটিং টাইম শেষ। মেইন গেট বন্ধ করে দিতে হবে। রাজের দুচোখের কোল বেয়ে অশ্রু টলমল করছে। বিষন্ন কান্ত -শ্রান্ত, বুকে এক রাশ শূন্যতার হাহাকার নিয়ে রাজ রুপার থেকে বিদায় নেয়। রহমত আলী গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। রাজ মনের কপাট লাগিয়ে দাঁতে দাঁত চেয়ে কষ্টগুলো বুকে সয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়। হাটতে হাটতে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে নিবিড় আধাঁরে রুপা সাদা ওড়না আন্দোলিত দৃশ্য তখনো দৃশ্যমান। ১৭ বছরের স্বপ্নের গড়া ভালোবাসার প্রসাদ খানি বসন্তে ঝড়া শুকনো পাতার মতো পদতলে পৃষ্ট হওয়া নিশ্চিত জেনে ফিরছে। চলতে চলতে আনমনে মুঠোফোন হাতে নিয়ে রুপা দেওয়া চিরকুট খানি মোবাইলের আলোয় দেখে ০১৭১৭৫৭২২.. ডায়াল করতেই এক সুরেলা নারী কন্ঠ ভেসে আসে ‘ আপনি যে নম্বরটিতে কল করেছেন, তার কোন অস্তিত্বই নেই’।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আহা রুবন
পড়তে ভাল লেগেছে। বানানের দিকে নজর দিতে হবে। সাধু চলিতের মিশ্রণ আছে। যেমন উপর নয় ওপর, বাহিরে নয় বাইরে। বেশি বেশি পড়ুন ভুলগুলো ধরতে পাবেন। সাফল্য কামনা করি।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।